ফ্রি-রেডিক্যাল প্রোটেক্টর এন্টি অক্সিডেন্টযুক্ত ফুড সাপ্লিমেন্ট বা সুপারফুড বর্তমান নাগরিক জীবনে একটি মানুষের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে সেটা অবশ্যই পরিমান মত। ফুড সাপ্লিমেন্ট মূলতঃ কোন ঔষধি পণ্য নয়, এগুলো মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় অর্থাৎ শারীরবৃত্তীয় ফাংশন সংশোধন করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে অনেকেই হয়তো চিন্তা করছেন ফ্রি-রেডিক্যাল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট আবার কি জিনিস।

ফ্রি রেডিক্যাল Free radicals হচ্ছে অক্সিজেন বিপাক ক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট সক্রিয় অণু বা একটি বিষাক্ত উপজাত Byproducts যা আমাদের শরীরে মুক্তভাবে চলাফেরা করে। এই মুক্ত অণু অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রক্রিয়ায় শরীরের ডি.এন.এ এবং জীবিত কোষসমুহকে ধ্বংস সাধন করে, ফলশ্রুতিতে আমাদের শরীর ক্যান্সার, হৃদরোগ, প্রদাহজনিত রোগ, চোখে ছানি ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।
সাধারণভাবে বলতে গেলে, আমাদের সেল বা কোষগুলোতে চলা সব কেমিক্যাল রিয়েকশনের সময় অক্সিজেন পুরোপুরিভাবে বিজারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন হয়। কিন্তু যখন অক্সিজেনের এই বিজারণ প্রক্রিয়া আংশিকভাবে ঘটে যায় তখনই অনাকাংখিত ভাবে বাই-প্রডাক্ট হিসেবে যে প্রডাক্ট বের হয়ে আসে তাকেই রিয়েকটিভ অক্সিজেন স্পেসিস বলে। এদের মাধ্যমে শরীরে যে ড্যামেজ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় তাকেই ফ্রি রেডিক্যাল ইনজুরি বলে, আর যারা এই ড্যামেজ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাদের এক কথায় ক্ষতিকর অক্সিডেন্টও বলে।
সুতরাং ফ্রি রেডিক্যাল হলো এমন এক ধরনের কেমিক্যাল স্পেসিজ Chemical Species যাদের সর্ব বাইরের কক্ষ পথে বেজোড় সংখ্যক ইলেকট্রন থাকে, যা খুবই অস্থির, ক্ষণস্থায়ী ও আনপ্রেডিক্টেবল বা অপ্রত্যাশিত। এই অস্থায়ী ইলেকট্রনগুলো জোড়ার অভাবে সর্বদাই রিয়েকটিভ অবস্থায় থাকতে চায়, ফলে বারবার অনাকাঙ্খিত রিয়েকশন হয়ে নতুন নতুন রিয়েকটিভ অক্সিজেন স্পেসিজ তৈরি হতে থাকে আর ফলে কোষের মধ্যে থাকা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট উপাদানগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হতে থাকে।
ক্ষতিকর এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে প্রাকৃতিক ভাবে শরীরে প্রস্তুত থাকা এন্টি অক্সিডেন্টগুলো আনপ্রেডিক্টেবল অক্সিজেন স্পেসিজগুলোকে নানারকম রিয়েকশনের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। এই নিষ্ক্রিয় করে ফেলার কাজ যত বেশি হবে তত বেশি আমরা ফ্রি রেডক্যাল ইনজুরির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারব।
তবে টাটকা খাবার দাবার পাওয়া যখন কিছু ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে যাচ্ছে, সেখানে ক্ষেত্র বিশেষে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে কোন না কোন নামী কোম্পানির তৈরী করা ফুড সাপ্লিমেন্ট বা সুপার ফুড গ্রহণ করা যেতে পারে।
মনে রাখবেন, ঋতুভেদে প্রকৃতি থেকে পাওয়া ফ্রি-রেডিক্যাল প্রোটেক্টর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদানসমূহ প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে প্রাণিজ আমিষ, বিশেষ করে গরু ও ছাগলের মাংস খাওয়া কমিয়ে আনা, প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে তিন দিন পরিমিত ব্যায়াম করা এবং শৃঙ্খলিত জীবন যাপন করা আমাদের দীর্ঘায়ু লাভে সহায়ক।
সাধারণভাবে বলতে গেলে, আমাদের সেল বা কোষগুলোতে চলা সব কেমিক্যাল রিয়েকশনের সময় অক্সিজেন পুরোপুরিভাবে বিজারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন হয়। কিন্তু যখন অক্সিজেনের এই বিজারণ প্রক্রিয়া আংশিকভাবে ঘটে যায় তখনই অনাকাংখিত ভাবে বাই-প্রডাক্ট হিসেবে যে প্রডাক্ট বের হয়ে আসে তাকেই রিয়েকটিভ অক্সিজেন স্পেসিস বলে। এদের মাধ্যমে শরীরে যে ড্যামেজ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় তাকেই ফ্রি রেডিক্যাল ইনজুরি বলে, আর যারা এই ড্যামেজ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাদের এক কথায় ক্ষতিকর অক্সিডেন্টও বলে।
ফ্রি রেডিক্যালগুলো আসলে কী?
আমরা জানি, প্রত্যেকটি পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা হলো পরমাণু। এই পরমাণু গঠিত হয় ইলেকট্র্রন, প্রোটন ও নিউট্রন দিয়ে যার কেন্দ্রে জড়াজড়ি করে থাকে প্রোটন ও নিউট্রন আর কেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরতে থাকে বিভিন্ন সংখ্যক ইলেকট্র্রন। আসলে কেমিক্যাল রিয়েকশন বলতে বাইরে কক্ষপথে ঘুরতে থাকা ইলেকট্র্রনের যোগ-বিয়োগকে বোঝায়।
ক্ষতিকর এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে প্রাকৃতিক ভাবে শরীরে প্রস্তুত থাকা এন্টি অক্সিডেন্টগুলো আনপ্রেডিক্টেবল অক্সিজেন স্পেসিজগুলোকে নানারকম রিয়েকশনের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। এই নিষ্ক্রিয় করে ফেলার কাজ যত বেশি হবে তত বেশি আমরা ফ্রি রেডক্যাল ইনজুরির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারব।
ফ্রি রেডিক্যাল স্পেসিজ কখন উৎপাদিত হয়?
ফ্রি রেডিক্যাল ও অন্যান্য রিয়েকটিভ অক্সিজেন স্পেসিজ মানবদেহে স্বাভাবিক প্রয়োজনীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে, এক্স-রে, ওজোন, ধূমপান, অত্যন্ত মানসিক ও শারীরিক চাপে থাকা ব্যক্তির শরীরে, বায়ুদূষণকারী ও শিল্প রাসায়নিকের এক্সপোজারের মতো বাহ্যিক উৎসের উত্তেজকের ভূমিকার কারণে তৈরি হতে থাকে।
এ ছাড়া উদ্বেগের সাথেই বলতে হচ্ছে, চিনি জাতীয় খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, বেকিং, ডিপ ফ্রাইং ফুড, টিনজাত খাবার, ট্রান্সফ্যাট, মদ্যপান, মিষ্টি আচার, চকোলেট, চিপস, বিস্কুট এবং কেবল সুস্বাদু ও স্থায়ী করার উদ্দেশে ডালডা, পার্শিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড খাবার ইত্যাদি মানবসৃষ্ট পুষ্টিহীন খাবার ফ্রি রেডিক্যাল ইনজুরি তৈরি করার ভাগাড়।
ফ্রি রেডিক্যাল বেড়ে যাওয়ার কারণ কি?
এমন কিছু নিয়ামক রয়েছে যাদের প্রভাবে আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিক্যালের আধিক্য দেখা দিয়ে তা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসে রূপ নিতে পারে। এর কিছু কারন হলো - রেডিয়েশন, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার, ধূমপান, এলকোহল, তেলে ভাজা খাবার, স্থুলতা, সুষম খাবারের অভাব, কিছু কিছু এলোপ্যাথিক ঔষধ সেবন, নানা প্রকারের দূষণ ইত্যাদি।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মূলতঃ কি?
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট Antioxidant হলো একটি অণু যা অন্যান্য অণুর জারণ Oxidation ক্রিয়ায় বাধা দেয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আমাদের দেহে অনবরত উৎপাদিত হচ্ছে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালস। এই ফ্রি রেডিক্যালকে নিষ্ক্রিয় করতে ভূমিকা পালন করে থাকে এন্টি অক্সিডেন্ট।দেখা গেছে, যারা সুদীর্ঘ বছর বেঁচে থাকেন তাদের দেহে সুপার অক্সাইড ডিসমুটেজ নামক এনজাইম তৈরি হয় যা ফ্রি রেডিক্যালকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে। মানুষের দেহের অভ্যন্তরেও ফ্রি রেডিক্যালকে নিষ্ক্রিয় করার মতো পদার্থ আছে। যেমন বিলিরুবিন, গ্লুটাথিওন ইত্যাদি। আবার কিছু খাদ্য-উপাদান থেকেও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যেমন বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন 'সি' ও ভিটামিন 'ই'।এসব অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলো প্রবলভাবে কাজ করতে দেখা যায় না। তবে ধীরে ধীরে হলেও এরা মুক্ত মৌলের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের বিরোধিতা করে এবং কোষকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়।
কোন ধরনের খাবারে পাওয়া যায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের প্রাত্যহিক খাবারের মধ্যে পাওয়া সম্ভব। যেমন- গ্রীন টি, কফি, শসা, বেগুন, টমেটো, বাধাকপি, গাজর, গোলমরিচ, ওলকপি, পালং শাক, উদ্ভিজ্জ তেল, শিম, লাউ, কলা, পেয়ারা, তরমুজ, আমলকী, লেবু, বাতাবি লেবু, আনারস, কমলা লেবু, কাচা মরিচ, পুদিনা পাতা এবং এক রাশিয়ান গবেষনায় বলা হয়েছে হিমায়িত শাকসবজি এবং ফলমুলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পরিমাণে বেশি থাকে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার মূলত বয়স বাড়ার গতিকে ধীর করতে সহায়ক হয়। কারও কারও মতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলো হৃৎপিণ্ডকেও রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তাই এই আধুনিক এবং শহরে জীবনে ফরমালিন, ইথিলিন, কার্বাইড বা অন্য কোন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মিশানো শাক সবজি বা ফলমূল যেমন আমাদের জীবনকে তিল তিল করে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ঠিক তেমনি যেকোন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য বিহীন টাটকা শাক সবজি বা ফলমূলই হতে পারে আমাদের জন্য দীর্ঘায়ু লাভের উপায়। কারণ সেগুলিই মূলত আমাদের প্রত্যাহিক জীবনে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর চাহিদা পূরণ করে চলেছে।
মনে রাখবেন, ঋতুভেদে প্রকৃতি থেকে পাওয়া ফ্রি-রেডিক্যাল প্রোটেক্টর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদানসমূহ প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে প্রাণিজ আমিষ, বিশেষ করে গরু ও ছাগলের মাংস খাওয়া কমিয়ে আনা, প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে তিন দিন পরিমিত ব্যায়াম করা এবং শৃঙ্খলিত জীবন যাপন করা আমাদের দীর্ঘায়ু লাভে সহায়ক।
ডাঃ দেলোয়ার জাহান ইমরানরেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক ডক্টর এন্ড প্রাইভেট প্র্যাক্টিশনার