চিরহরিৎ ও বিএম কলেজ: খাজা মাসুম বিল্লাহ কাওছারী

"চিরহরিৎ" একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকার নাম। ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে বরিশালে অবস্থিত বাংলাদেশের অক্সফোর্ড খ্যাত 'বিএম কলেজ" এর যারা ছাত্র ছিলেন তাদের কাছে অনেকটা পরিচিত নাম। 

অকাল প্রায়ত বন্ধু মোঃ নাসির উদ্দীন এবং আমি "সৈকত সাহিত্য সেবা পরিষদ' নামে একটি সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম ১৯৯৮ সালে কলেজে ভর্তি হওয়ার পরপর সময়ে। আমি ছিলাম সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং নাসির ছিলেন সেক্রেটারী। আমাদের এলাকা থেকে আমরা যারা ভর্তি হয়েছিলাম তাদের মধ্যে পঁচাকোড়ালীয়ার মাহ্বুব মাষ্টার এর ছেলে বাবলু (সমাজ কল্যাণ বিভাগে) দক্ষিণ চরগগাছিয়া পহলান বাড়ির মোঃ নাসির উদ্দীন (বাংলা বিভাগে) বাড়ৈ বাড়ীর সোনালী (যতদূর মনে পরে ইকোনমিক্স বিভাগে) এবং আমি প্রথমে বাংলায় পরে সাবজেক্ট পরিবর্তন করে ইংরেজিতে ভর্তি হই। 

যদিও আমি সম্মিলিত মেধা তালিকায় কলেজের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলাম, যার কারণে প্রথম ধাপেই মেধা অনুযায়ী আমি ইংরেজী পাই। ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে ২০ এর মধ্যে ১৮ পাওয়ায় এবং ভাইবা বোর্ড এর একজন প্রফেসরের আক্রশের শিকার হয়ে (তিনি আমাদের পারিবারিক পরিচিত) ও  নীল কান্ত ব্যাপারী স্যারের কথার ভিত্তিতে আমাকে ইংরেজী বিষয় না দিয়ে বাংলাতে ভর্তির প্রস্তাব দেওয়া হলো। অসহায় হয়ে আমি ডাইরেক্ট ভাইবা বোর্ডের প্রতি সম্মান রেখে রিএক্ট করেছিলাম "স্যার মেধার ভিত্তিতে আমি ইংরেজী পাবো, আমাকে ইংরেজিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিন, আমি ইংরেজী ছাড়া পড়বোনা, নইলে দোয়া করবেন যেন উনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারি"     

ভাইভা বোর্ডকে সালাম দিয়ে বাহিরে বের হয়ে সোনালীর সাথে দেখা, জিজ্ঞাস করলো মাসুম ভাই কি জিগাইলো? ভাইভা ভালো হয়েছে? আমি বললাম জানি না, তবে আমার মনে হয় বিএম কলেজে পড়া হবেনা। শিক্ষা জীবনে একজন শিক্ষকের এভাবে বৈষম্য মূলক আচরণের কারণে আমি অনেক হতাশ হয়েছিলাম।

আশায় বুক বেঁধে ছিলাম স্যাররা হয়তবা পরে আমাকে ইংরেজী বিষয়েই নমিনেশন দিবে ভর্তি হওয়ার জন্য। কিছু দিন পর ফলাফল বের হলো দেখলাম আমাকে বাংলায় সিলেকশন দিয়েছে ইংরেজীতে না দিয়ে। 

দেখা করলাম বাংলার তখনকার বিভাগীয় চেয়ারম্যান প্রফেসর নীলকান্ত ব্যাপারী স্যারের সাথে। সব খুলে বললাম, বাংলার ব্যাপারে আমার অনাগ্রহ এবং ইংরেজির ব্যাপারে আমার কেন এত আগ্রহ।  স্যারও আমাকে অনেক ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু আমিতো নাছোড় বান্ধা ভর্তি হলে আমি ইংরেজীতেই হবো।  স্যার পরামর্শ দিলেন এখন ভর্তি হও পরে সাবজেক্ট পরিবর্তন করে ইংরেজিতে যাওয়ার সুযোগ দিবো তোমাকে। স্যারের কথা মতো ভর্তি হয়েগেলাম বাংলা বিভাগে। অন্য দিকে ইংরেজি বিভাগের তখনকার বিভাগীয় প্রধান ছিলেন প্রফেসর ডঃ হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ স্যার। আমার বিষয়ে স্যারের সাথে কথা বললাম, স্যার সবকিছু শুনে মৌখিক অনুমতি দিলেন ইংরেজী বিভাগে ক্লাস করার জন্য। ক্লাস শুরু করলাম ইংরেজী বিভাগে-মাহাবুব, বাশার, সৈকত,লাবণ্য, বন্যা,উম্মে হাবিবা, রিপা ওরা কে কোথায় জানিনা।  

বাংলা বিভাগের বন্ধু নাসির অকালেই মারা গেলো,আজাদ আলাউদ্দীন দৈনিক বাংলাদেশ বাণী পত্রিকার সম্পাদক, নার্সিং কলেজ শিহরণ অ্যাকাডেমির  প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল  মুন্সী এনাম সুনামের সাথেই স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করছে।  

সৈকত সাহিত্য সেবা পরিষদের আওতায় একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করার  সিদ্ধান্ত নিলাম আমি এবং নাসির। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার ইসলামীক উনিভার্সিটিতে আমি ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেলাম, এখানে বলে রাখা ভালো যে আমাদের সময় ২ টার্ম এডমিশন এর জন্য কলেজ বা উনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হতো। বন্ধু নাসির কে সম্পাদনার দায়িত্ব দিয়ে সাহিত্য পত্রিকাটির প্রকাশনার কাজ শুরু করি। তখনকার যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা সহজ ছিলোনা। অনেকগুলো সংখ্যা বের করেছিলাম, এর মধ্যে অকালে আল্লাহর ডাকে নাসির দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলো। আল্লাহ যেন নাসিরকে ক্ষমা করে জান্নাত দান করেন, আমিন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন