১৮০০ শতাব্দীর দায়ী ইলাল্লাহ খাজা ফয়জুদ্দীন (রহঃ) (১৮৫৪-১৯৫৫)

আল্লাহ তায়ালার একান্ত অনুগ্রহ ও দয়ায় যুগে যুগে ক্ষণজন্মা কিছু দায়ী ইলাল্লাহ ও মহামনীষীদের আবির্ভাব ঘটে। অভিবক্ত ভারতবর্ষের দক্ষিণ অঞ্চলে আধ্যাত্নিক সুফীসাধক ও শরীয়াত-মারেফাতের উঁচুতপকার একজন তাপশ ও দায়ীইল্লাল্লাহ ছিলেন আল্লামা শাহ্সুফী হযরত খাজা ফয়জুদ্দীন আল-কাদরী ছাহেব রহ: (১৮৫৪-১৯৫৫) । আল্লাহ প্রেম, খোদাভীতি, দুনিয়া বিমুখতা, স্বভাবে শান্ত, স্থিতধী,প্রচার বিমুখ,সৎ, নির্লোভ, স্বল্পবাক, অনুচ্ছকণ্ঠ, নেতৃত্বে প্রখর, ভাব গাম্বীর্যপূর্ণ ন্যায়পরায়ণ মহৎ ও উন্নত গুনাবলি সমৃদ্ধ ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ ছিলেন তিনি । প্রচার বিমুখ এই মহান আধ্যাতিক সুফী সাধকের আবির্ভাব ঘটে ইংরেজী ১৮০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে চন্দ্রদ্বীপ (বরিশালের পূর্ব নাম) এর বাখেরগঞ্জ জেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম নবাব পরিবারে।

আবার কেউ কেউ বলেন হযরত শাহসুফী খাজা ফয়জুদ্দীন আল-কাদরী ছাহেব (র:) তদানীন্তন বাকেরগঞ্জ জেলার/ মহাকুমার অন্তৰ্গত মরিচবুনিয়া গ্রামে নিজ পিত্রালয়ে হিজরি ১২৭০ ইংরেজি ১৮৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। খানবাহাদুর নবাব আহসানউল্লাহর বংশধর আল্লামা শাহ্সুফী হযরত ছলেমউদ্দীন রহঃ হলেন তার সম্মানিত পিতা। তার পিতা মরহুম আল্লামা শাহ্সুফী হযরত ছলেমউদ্দীন (রহঃ) ছিলেন একজন আলেমে দ্বীন ও তখনকার সময়ের বিখ্যাত বুযুর্গ ব্যাক্তিত্ব ও সুফী পন্ডিত।
দায়ী ইলাল্লাহ
বঙ্গে একদিকে সূফীবাদী ও পীর-মুরিদী ধারা মানুষকে ইসলামের দিকে দীক্ষিত করতে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করে। অপরদিকে রাজনৈতিক ভাবে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সমাজে ন্যায়, সমতা ও বৈষম্যহীনতা ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়। যার কারণে বর্ণবৈষম্য না থাকায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল পরিমাণ নিজগোত্র কর্তৃক জুলুমের শিকার বৌদ্ধ ও নিম্নজাতের হিন্দুরা দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসতে থাকে ইসলামের মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে।
 
১৩ শত শতাব্দীতে রাজনৈতিকভাবে ইসলামের আগমনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে প্রথম ফোরকানিয়া মাদরাসা, মক্তব, খানকাহ, মেহমানখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ধর্মীয় ও ইসলামী জ্ঞান অর্জনে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। ১২৭০ মতান্তরে ১২৭৭ সালের দিকে সুদুর ইয়ামেন থেকে শেখ শরফউদ্দিন আবু তাওয়ামা ইসলামের মহান দাওয়াত নিয়ে বাংলায় ছুটে আসেন এবং সোনারগায়ের মোগরা পাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন উপমহাদেশের প্রথম দরসে বুখারীর তালীমী মাদরাসা।

১৩৩৮ থেকে ১৫৩৮ পর্যন্ত বাংলার স্বাধীন সুলতানরা শাসন করার পরে এদেশ শাসন করেন মোগল শাসকরা। ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত এ দেশ শাসন করে পশ্চিমা ব্রিটিশরা। মুসলিমরা শিক্ষা তথা জ্ঞান ও বিজ্ঞান থেকে এ সময়ে ধীরে ধীরে অনেকটাই পিছিয়ে পরে যায়। এই ব্রিটিশ আমলে পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠী ও ঢাকা ‘নগর' এ কাশ্মির থেকে আসা খাজা পরিবার ও এ পরিবারের উপাধি প্রাপ্ত নবাবদের ব্রিটিশদের সাথে সখ্যতা গড়ে ধীরে ধীরে। একই সঙ্গে জনকল্যানমূখী কাজে এ অঞ্চলের মানুষকে সম্পৃক্ত করে নিজেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ শহরকে বদলে দিয়েছেন।

যদিও ঢাকার আদি বা খানদানি নওয়াব পরিবার ছিল নিমতলী কুঠির নায়েব-নাজিমরা, যে-বংশের শেষ উত্তরাধিকারীর মৃত্যু হয়েছিল ১৮৪৩ সালে। অবশ্য নায়েব-নাজিমদের আগে ঢাকা যখন ছিল বাংলার রাজধানী এবং ঢাকায় বসে যে- মুঘল সুবাদাররা বাংলা শাসন করতেন তাঁদের বলা হতো নওয়াব। তবে ব্রিটিশদের কাছ থেকে পাওয়া নবাব উপাধিতে খাজা পরিবার তাদের কর্মভূমিকায় তৎকালীন ঢাকাসহ এর আশেপাশের অঞ্চল থেকে শুরু করে বরিশাল,বাকেরগঞ্জ,পটুয়াখালী, কুমিল্লা, টাঙ্গাইলসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মানুষের মনে নবাব হিসেবেই স্থান করে নেয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন