ঢাকার নবাব পরিবারে ১৮ শ শতাব্দীতে কে এই তাপস খাজা ফয়জুদ্দিন রহঃ (১৮৫৪-১৯৫৫)

বালক হযরত খাজা ফয়জুদ্দীন রহঃ (১৮৫৪-১৯৫৫) এর প্রখর ধীশক্তি ও গুনগত মেধা দেখে তার দাদী ও নিকট আত্মীয়রা তার দাদাকে এ বলে পরামর্শ দেন যে, ছেলেটা অত্যন্ত মেধাবী। তাকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিক্ষিত করলে একজন সফল ‘জজ’ হয়ে পরিবারের সুনাম সুখ্যাতি ধরে রাখবে। তখনকার সময়ে নবাবরা বঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন। জবাবে তার আল্লাহওয়ালা ও বুযর্গ দাদা বলেছিলেন, “আমার দুনিয়ার জজ দরকার নাই আমার দরকার আখেরাতের “জজ”। দিন দিন তার মেধা, প্রখর বুদ্ধিমত্তা এলাকার সকল মানুষের মনে দাগ কাটতে থাকে, সকলের মনে বালক ফয়জুদ্দিনের প্রতি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আস্থা ও নির্ভরতা তৈরী হতে শুরু করে।
তাপস খাজা ফয়জুদ্দিন রহঃ
এরপর বুযুর্গ দাদা তাকে তৎকালীন প্রাচীনতম প্রশিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়েদেন ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার জন্য। তার মাঝে খোদাপ্রদত্ত বিস্ময়কর মেধা দেখে মাদরাসার মোহতামিম ও শায়েখগণ তাকে অত্যন্ত স্নেহ ও যত্ন সহকারে তার শিক্ষা-দীক্ষার বিশেষ তত্ত্বাবধান করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বালক ফয়জুদ্দীন অসাধারণ মেধাবী হিসাবে মাদরাসায় সুপরিচিতি লাভ করেন। দিন দিন তার মেধা, প্রখর বুদ্ধিমত্তা এলাকার সকল মানুষের মনে দাগ কাটতে থাকে, সকলের মনে বালক ফয়জুদ্দিনের প্রতি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আস্থা ও নির্ভরতা তৈরী হতে শুরু করে।

ছাত্রজীবনেই অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সময়ানুবর্তি ছিলেন বালক ফয়জুদ্দীন রহঃ। অধ্যয়ন, অধ্যাবসায় ও জ্ঞানচর্চায় ছিলেন ব্যতিক্রমী অন্যদের থেকে। মাদরাসা থেকে বাড়ি বা অন্য কোন স্থানে যাওয়ার সময় কিতাবাদি নিয়ে চিন্তা ফিফির করাই ছিলো তার কাজ। পথে পথে হাঁটতেন আর পড়তেন, সুযোগ পেলেই কিতাব পড়তে বসে যেতেন। কিতাব পড়ায় এমন নিমগ্ন থাকতেন যে, কখনো কখনো পথও ভুলে যেতেন তিনি। অন্যান্য সাথীরা যখন অলসতায় সময় নষ্ট করতো তখনও তাকে কিতাব অধ্যয়নে মগ্ন দেখা যেত। হযরত শাহ্সুফী খাজা ফয়জুদ্দীন রহঃ হাদিস, ফিকহ, মানতিক,ইসলামী আইন, হিকমত, বালাগত, উছুল, আকায়েদ,তাফসির, ফিলছফা, ফারায়েজ সহ যাবতীয় বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন। 

আরবী, উর্দু, বাংলা ও ফারসি ভাষায়ও তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তৎকালীন সময়ে দায়ী ইলাল্লাহ হিসেবে ওয়ায়েজ এবং বক্তা হিসাবে তার প্রসিদ্ধি ছিল ব্যাপক। যুক্তি তর্কে ছিলেন তিনি অনেক বাকপটু। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে তিনি আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে আত্ম নিয়োগ করেন পার্থিব সব কিছু তার অনুগত সন্তান হযরত শাহ্সুফী খাজা নাছের রহঃ এর উপর অর্পণ করে । তখন থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত বাকি জীবন তিনি একজন সুফি সাধক হিসাবে অতিবাহিত করেন মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ইংরেজি ১৯৫৫ সালে ইহজগৎ থেকে চির বিদায় নেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন