পৃথিবীর আদিতম ধর্মের প্রধান নবীর জন্ম ও ওফাত দিবস

গতকাল ছিলো মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস। মুসলিম জাহানে এই দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডীত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মহানবী (সা.)কে প্রেরণ করার পূর্বে যতজন নবী (আ.) প্রেরণ করেছেন তাদের প্রত্যেককে এই মর্মে শপথ করিয়ে নিয়েছেন যে, তার জীবদ্দশায় মহানবী (সা.) পৃথিবীতে আগমন করলে তিনি তার প্রতি ঈমান আনবেন।
তাওরাত ও ইঞ্জিল শরীফে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের ঘোষণা নিয়ে ইসলামী বিশ্বাসে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। মুসলিমদের মতে, কুরআনের অনেক আয়াতে বলা হয়েছে যে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলোতে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। আজকের উপস্থাপনায় পবিত্র তাওরাত ও ইঞ্জিল শরীফে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর শুভাগমন বিষয়ে কি বর্ণিত হয়েছে বিবরণ দেয়ার চেষ্টা করছি।
নবী মহানবী (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস
তাওরাতে (তৌরাত) মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে ঘোষণা এসেছে এভাবে: তাওরাত হলো মুসা (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ কিতাব। ইসলামী ঐতিহ্যে মনে করা হয় যে তাওরাতে সরাসরি মহানবী (সা.)-এর আগমন সম্পর্কে উল্লেখ ছিল, যদিও কালের বিবর্তনে এই গ্রন্থের মূল ভাষ্য পরিবর্তিত হয়েছে বলে মুসলিমরা বিশ্বাস করেন। তাওরাতের কিছু অংশে মহানবী (সা.) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার আভাস পাওয়া যায়, যেমন: দ্বিতীয় বিবরণ (Deuteronomy) 18:18-19: এই আয়াতে আল্লাহ মুসা (আ.)-কে বলেন, "আমি তাদের ভাইদের মধ্য থেকে তোমার মতো একজন নবী তুলব এবং আমি আমার কথা তার মুখে রাখব; সে তাদের যা বলবে তা তারা শুনবে।" মুসলিমদের মতে, "তাদের ভাইদের মধ্য থেকে" অর্থ ইসমাইল (আ.)-এর বংশধরদের মধ্যে একজন নবীর ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, আর তা হযরত মুহাম্মদ (সা.)। ইসমাইল (আ.) এবং ইসহাক (আ.) উভয়েই ইবরাহিম (আ.)-এর পুত্র, তাই "ভাইদের" অর্থ ইসমাইল (আ.)-এর বংশধর।

ইশাইয়া (Isaiah) 42:1-4: এই অংশে বর্ণনা করা হয়েছে যে একজন দাস আসবেন, যিনি জাতিগুলিকে বিচার করবেন এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবেন। মুসলিমদের মতে, এটি মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি নির্দেশ করে, যিনি আরবের মক্কা এবং মদিনায় একটি ধর্মীয় বিপ্লব ঘটিয়ে ইসলামের শিক্ষাগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ইঞ্জিলে মুহাম্মদ (সা.)-এর ঘোষণা:
ইঞ্জিল শরীফে (বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট)ও মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন সম্পর্কে কিছু ইঙ্গিত রয়েছে বলে মুসলিমরা বিশ্বাস করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো "পরাকলিত" বা "Paraclete" নামে এক ব্যক্তির আগমন সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী, যা ইঞ্জিলে উল্লেখিত আছে।
ইয়োহান (John) 14:16, 15:26, 16:7: এই আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে, যীশু (আ.) বলছেন, "আমি পিতার কাছে অনুরোধ করব, আর তিনি তোমাদের জন্য আরেকজন সহকারী (Paraclete) পাঠাবেন... তিনি সত্যের আত্মা, যিনি তোমাদের সব সত্যের মধ্যে নেতৃত্ব দেবেন।" মুসলিম ঐতিহ্যে, "Paraclete" বলতে মুহাম্মদ (সা.)-কেই বোঝানো হয়েছে, যিনি যীশু (আ.)-এর পরে আসেন এবং শেষ নবী হিসেবে ইসলামের সত্য পথ দেখান।

ইয়োহান (John) 16:12-14: যীশু (আ.) এখানে বলেন, "তোমাদের আরও অনেক কথা বলার আছে, কিন্তু এখন তা সহ্য করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। কিন্তু যখন সত্যের আত্মা আসবেন, তখন তিনি তোমাদের সকল সত্যের মধ্যে পরিচালিত করবেন।" মুসলিমদের মতে, এখানে মুহাম্মদ (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, যিনি কুরআনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা দিয়েছেন যা পূর্ববর্তী গ্রন্থগুলোর পরিপূর্ণতা।
কুরআনে মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে তাওরাত ও ইঞ্জিলের বর্ণনা:
কুরআনেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে পূর্ববর্তী নবীরা এবং গ্রন্থগুলো মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন
সূরা আল-আ'রাফ (৭:১৫৭): "যারা রাসুলকে অনুসরণ করে, সেই উম্মি নবীকে, যাকে তারা নিজেদের কাছে থাকা তাওরাত ও ইনজিলে লেখা পায়।"

সূরা আস-সাফ (৬১:৬): এখানে বলা হয়েছে, ঈসা (আ.) বনী ইসরাঈলকে বলেন: "হে বনী ইসরাঈল, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসুল, আমার পরে আহমদ নামে একজন নবীর আগমন সম্পর্কে সুসংবাদ দানকারী।" মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে 'আহমদ' মুহাম্মদ (সা.)-এর আরেকটি নাম।
তাওরাত ও ইঞ্জিলের এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। যদিও ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সাধারণত এই ব্যাখ্যা মেনে নেন না, মুসলিমদের বিশ্বাসে এটি নবুওতের ধারাবাহিকতার একটি অপরিহার্য অংশ।

তাওরাত ও ইঞ্জিল শরীফে মহানবী (সা.) সম্পর্কে বিষদ আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া পূর্বের অন্যান্য আসমানী কিতাবেও রাসুল (সা.) এর কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমেই প্রতীয়মান হয় যে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বিশ^নবী এবং ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের একমাত্র বাহক। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেকে মহানবী (সা.) এর পরিপূর্ণ আনুগত্যতা অর্জনের তৌফিক দান করুন।
আমিন।

লেখক: হাফিজ আহমেদ,অধ্যাপক ও গবেষক।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন